সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থসহ

ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহপবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত সমগ্র মুসলিম উম্মার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত সমূহের মধ্যে অন্যতম। ঠিক এজন্য এই আয়াতগুলো কীভাবে আপনার দৈনন্দিন জীবনে শান্তি ও বরকত আনতে পারে, তার বিস্তারিত আলোচনা এই পোস্টে রয়েছে।
সূরা-বাকারার-শেষ-দুই-আয়াত-বাংলা-অর্থসহ
শুধু তাই নয় আপনি কি আরবি পড়তে পারেন না? সমস্যা নেই বাংলা পড়তে পারলেই এ সকল আমলসমূহ করতে পারবেন, কেননা আমাদের এখানে বাংলা অর্থসহ আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থসহ। 
পোস্ট সূচিপত্রঃসূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থসহ

মর্ডান আইটি

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থসহ

সহীহ মুসলিম- হাদিসে আছে, সূরা বাকারার এই দুই আয়াতের মাধ্যমে একজন মুমিন তার ঈমানের প্রতি অঙ্গীকার ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে থাকেন। যেখানে আরো বলা হয়েছে, এই শেষ দুই আয়াত আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে এবং শয়তানকে দূর রাখে।
 আয়াত ২৮৫:

آمَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَـٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍۢ مِّن رُّسُلِهِۦ ۚ وَقَالُوا۟ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ ٱلْمَصِيرُ

🕋বাংলা উচ্চারণঃ "আমানার রসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি, ওয়াল মু’মিনূন। কুল্লুন আামানা বিল্লাহী, ওয়া মালাঈকাতিহী, ওয়া কুতুবিহী, ওয়া রুসুলিহী;লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহী। ওয়া ক্বালু সামি'না ওয়া আতা'না। গুফরানাকা রাব্বানা, ওয়া ইলাইকাল মাসীর।"

আয়াত ২৮৬:

لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا ٱكْتَسَبَتْ ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ إِن نَّسِينَآ أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَآ إِصْرًۭا كَمَا حَمَلْتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦ ۖ وَٱعْفُ عَنَّا وَٱغْفِرْ لَنَا وَٱرْحَمْنَآ ۚ أَنتَ مَوْلَىٰنَا فَٱنصُرْنَا عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ

🕋বাংলা উচ্চারণঃ "লা ইয়ুকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস’আহা। লাহা মা কাসাবাত, ওয়া আলাইহা মা ইক্তাসাবাত।রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন নাসিনা আউ আখতা’না। রাব্বানা, ওয়া লা তাহমিল ‘আলাইনা ইসরান, কামা হামালতাহু ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা। রাব্বানা, ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাক্বাতা লানা বিহ। ওয়া‘ফু আন্না, ওয়াগফির লানা, ওয়ারহামনা। আন্তা মাওলানা, ফাংশুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন।"

২৮৫ নং আয়াতের বাংলা অর্থঃ রাসূল (সা.) ঐ কিতাবে বিশ্বাস করেছেন, যেই কিতাব তাঁর প্রতি তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। এবং সংগ্রহ মুসলিম উম্মাহ ও তাই বিশ্বাস করেন। সেই সকল বিষয়গুলোর প্রতি, আর সেগুলা হল ফেরেশতা, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলদের এবং তার পয়গম্বরদের ওপর। তারা বলে, “আমরা আল্লাহর নির্দেশ শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আমরা তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আর তোমার দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।


২৮৬নং আয়াতের বাংলা অর্থঃ সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের অর্থ সমূহে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন তিনি কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা করে, তার ফল সে-ই পাবে; আর যা করবে, তার দায়ভারও তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! যদি আমরা ভুলে যাই বা ভুল করি, তাহলে তুমি আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর বোঝা চাপিও না, যেমন তুমি চাপিয়ে ছিলে আগের জাতিদের ওপর, এবং আমাদের পথভ্রষ্ট করো না। হে আমাদের প্রভু! আমাদের ওপর এমন কিছু চাপিও না, যা আমরা বহন করতে অক্ষম। আর আমাদের পাপ ক্ষমা করো, আমাদেরকে দয়া করো। তুমিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তাই তুমি আমাদেরকে সাহায্য করো কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে।

উৎসঃ পবিত্র আল কোরআন সূরা বাকারা আয়াত ২৮৫-২৮৬। 

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থসহ কেন জানা আপনার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থসহ জানা থাকলে আপনি আল্লাহতালার যে সকল গুরুত্বপূর্ণ রহমতের মধ্যে থাকবেন সেগুলোর ফজিলত সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস রয়েছে, যা এই আয়াতগুলোর বিশেষ গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের উল্লেখ নিচে করা হলোঃ

হাদিস ১ঃ সাহিহ মুসলিম-এ এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন "যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত রাতে পড়বে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।" (সাহিহ মুসলিম, হাদিস নং 808)

হাদিস ২ঃ হযরত নোমান ইবনে বশীর(রাযিঃ) হইতে বর্নিত আছে যে, আল্লাহতালার হাবীব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "পবিত্র কোরআন হলো শেষ উম্মতের একমাত্র আদর্শ যেখানে সূরা বাকারার শেষ দুইটি আয়াতের ফজিলত এতই বেশি যে কোন ব্যক্তি তা পাঠ করার পর ঘুমিয়ে পড়লে সে সমগ্র শয়তান এবং খারাপ জিন থেকে মুক্ত থাকে।" (তিরমিযী)


হাদিস ৩: সহীহ বুখারি-তে এসেছে: "সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাট করলেই তা আল্লাহর সাহায্য সেই ব্যক্তির উপর সব সময় কাজ করবে।" (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫০১২)

ফায়দাঃ গুরুত্ব আয়াত দুটি মুসলিমদের জন্য একটি রক্ষা এবং নিরাপত্তার উপায় হিসেবে কাজ করে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

হাদিস ৪ঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হইতে বর্নিত হয়েছে, একবার জিবরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসিয়াছিলেন, এমন তো অবস্থায় আসমান হইতে অনেক জোরে আওয়াজ শোনা গেল। জিবরাইল বলিলেন, "আসমানের এমন একটি দরজা খুলি আছে যাহা পূর্বে কখনো খুলে নাই। আর এই দরজা দিয়ে এমন একজন ফেরেশতা জমিনে আসিতেছে যে পূর্বে কখনো এই দরজা দিয়ে আসে নাই।" এবং সেই ফেরেশতা উপস্থিত হইয়া আরজ করিলেন, "সুসংবাদ হউক আপনার জন্য, আপনাকে দুইটা অতি মূল্যবান জিনিস দেওয়া হয়েছে যা অন্য কাউকে দেওয়া হয়নি। একটি সূরা ফাতিহা, দ্বিতীয়টি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত।" (সহীহ মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা যে সকল কারণে এই আয়াতগুলোর ফজিলত এত বেশি দিয়েছেন

মিরাজের রাতে দান সহীহ মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে যে, এ দুটি আয়াত রাসুল (সা.)-কে মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে আসমানে দান করা হয়েছে। 


এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা তাঁর 'আরশের নীচের ভাণ্ডার থেকে সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত এ উম্মাতকে দান করেছেন।

দৈনন্দিন জীবনে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আমলের গুরুত্ব

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। এবার চলুন আলোচনা করি এই আয়াতগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে আমরা এগুলো আমল করতে পারি।


ঈমান বৃদ্ধি: এই আয়াতগুলো নিয়মিত পাঠ করলে আমাদের ইমান বাড়তে থাকবে। আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তার কোরআনের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে।

সৎকর্মের প্রতি উৎসাহ: এই আয়াতগুলোতে সৎকর্মের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে যখন কোন ব্যক্তি এই আয়াতগুলো পাঠ করবে, তখন আমাদের মনে সৎকর্ম করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়।

ক্ষমা প্রার্থনা: এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে। আমরা যখন এই আয়াতগুলো পাঠ করি, তখন আমাদের মনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার অনুভূতি জাগ্রত হয়।


সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি: এই আয়াতগুলোতে সকল নবীদের প্রতি বিশ্বাস রাখার কথা বলা হয়েছে। এটি আমাদেরকে সহিষ্ণু হতে শেখায়।

দায়িত্ববোধ জাগরণ: এই আয়াতগুলোতে আমাদের নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যার ফলে এটি আমাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে।

আল্লাহর উপর ভরসা: এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা বলা হয়েছে। যখন আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাই, তখন এই আয়াতগুলো আমাদেরকে শক্তি দেয়।

কীভাবে আমল করবেন?

  • নিয়মিত পাঠ: এই আয়াতগুলো প্রতিদিন নিয়মিত পাঠ করার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে রাতে শোবার আগে পাঠ করলে এর ফজিলত আরো বেশি পাওয়া যায়।
  • অর্থ বুঝে পাঠ: শুধু মুখস্ত করে পাঠ করবেন না, বরং এই আয়াতগুলোর অর্থ বুঝে পাঠ করার চেষ্টা করুন।
  • জীবনে প্রয়োগ: এই আয়াতগুলোতে বর্ণিত বাণীগুলোকে আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন।
  • অন্যদের শিক্ষা দেওয়া: এই আয়াতগুলোর ফজিলত অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরকেও এই আয়াতগুলো পাঠ করতে উৎসাহিত করুন।

লেখক এর শেষ মন্তব্য

প্রত্যেক মুসলিম উম্মার জন্য সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থসহ এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে আপনারা সকলেই তা জানা এবং মানার মাধ্যমে উপকৃত হবেন। আশা করব আজকের আর্টিকেলটি আপনাদেরকে আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে শয়তানি বিপদ আপদ থেকে এবং ঈমানী শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এমন আরো অর্থ এবং জ্ঞানমূলক পোস্ট করতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মর্ডান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url